হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগার পর বিমা দাবির দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে ব্যবসায়ীরা সতর্ক করেছেন, কোনো কোম্পানি যদি গোঁজামিলের যুক্তি দাঁড় করায়, তারা তা মেনে নেবেন না। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে, পলিসির শর্ত পূরণ থাকলে ক্ষতিপূরণ দ্রুত পাওয়া যাবে এবং ব্যবসায়ীদের টাকা পেতে কোনো সমস্যা হবে না।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে টাকার অঙ্কে। বিজিএপিএমইএর সভাপতি মো. শাহরিয়ার জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত যে লিখিত রিপোর্ট এসেছে, তাতে সংস্থার মেম্বারদের ২৩ কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বা ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ড. মো. জাকির হোসেন জানিয়েছেন, শুধু কাঁচামালের দামই ২০০ কোটি টাকার উপরে। এছাড়া এআইটি ও ভ্যাটের হিসাব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতি ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার মধ্যে পৌঁছাবে। তবে ঠিক কত টাকার মালামাল পুড়েছে তা এখনও সঠিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।
তবে আমদানি-রফতানিকারীরা দাবি করছেন, বিপুল ক্ষতির বড় অংশই বিমার আওতায় রয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম নুরুজ্জামান বলেন, ‘ইনস্যুরেন্স ব্যবসার একটি অংশ। যদি এটি ১০০ শতাংশ প্রদানের আওতায় থাকে, তাহলে ব্যবসায়ীরা নিরাপদ থাকতে পারেন।’
বিমা থাকায় আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে কিছুটা সহজ হওয়ার ভরসা পেলেও বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের হুঁশিয়ারি, কোনো গোঁজামিল তথ্যের ভিত্তিতে বিমা কোম্পানিগুলো যুক্তি দাঁড় করালে তা ব্যবসায়ীরা প্রত্যাখ্যান করবেন। মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘কোনোভাবেই তালবাহানা করে বিমার ক্লেইম পরিশোধে বিলম্ব করা যেন না হয়। আমরা অনুরোধ করব সরকার যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। অন্তত আমি অর্থ উপদেষ্টা, বাণিজ্য উপদেষ্টাসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করব।’
বিমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পলিসির শর্ত কাভার করা থাকলে সহজেই দাবির টাকা পাওয়া সম্ভব। এস এম নুরুজ্জামান বলেন, ‘এই ১২ হাজার কোটি টাকার সম্পূর্ণ ১০০ শতাংশ কাভারেজ থাকলে ব্যবসায়ীদের কোনো ক্ষতি হবে না। বিমা কোম্পানিগুলো টাকা দেবে। সাধারণ বিমার একটি অংশ রিইনস্যুরেন্সের মাধ্যমে থাকে; বিদেশি কোনো কোম্পানির সঙ্গে রিইনস্যুরেন্স থাকলে সেটিও পাবে।’
বিমার আওতায় থাকা পণ্য ও অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপে এরমধ্যেই কাজ শুরু করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। মুখপাত্র সাইফুন্নাহার জানিয়েছেন, ‘অনেক সময় রিইনস্যুরেন্স থাকলে সাধারণ বিমা করপোরেশনের সঙ্গে কিছুটা সময় লাগে। এই পরিস্থিতিতে কোম্পানিগুলো প্রাথমিকভাবে নিজেদের অর্থ দিয়ে ক্ষতি পূরণ করে এবং পরে কাগজপত্রে হিসাব মিলিয়ে নেন। এতে ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতির বিষয়টি দ্রুত মোকাবিলা করা যায়। আইডিআরএ লস দ্রুত কাভার করার নির্দেশনা দেবে, যাতে ক্লেইমগুলো দ্রুত সেটেল হয়।’
বিমা না থাকা ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারকে বিশেষ তহবিল গঠন করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবিও তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।