এনসিপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ
পদ্মা সেতু এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ করে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা।
পদ্মা সেতু এলাকায় কিছুক্ষণের জন্য ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। বুধবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে পদ্মা সেতু হয়ে গোপালগঞ্জসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রবেশকারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন তাঁরা।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ফেসবুকে পদ্মা সেতু ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য ও সমন্বয়ক ইব্রাহীম নীরব। ৫টা ২০ মিনিটের দিকে শুরু করেন ব্লকেড কর্মসূচি। বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে পদ্মা সেতু এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত রয়েছেন এনসিপি সিরাজদিখান উপজেলার সমন্বয়ক নেওয়াজ খান, মুন্সিগঞ্জ জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী মো. মোরসালীন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুন্সিগঞ্জ জেলার মুখপাত্র অবন্তিকা, যুগ্ম আহ্বায়ক উম্মে হানিসহ অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য ও সমন্বয়ক ইব্রাহীম নীরব বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পালিয়ে গেলেও তার দোসরেরা এখনো বাংলাদেশের মাটিতে রয়েছে। এর নমুনা আজ গোপালগঞ্জে দেখা গেছে। ফ্যাসিস্টের দোসরদের আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব। এই বাংলার মাটি থেকে ফ্যাসিস্টদের বিদায় করে ছাড়ব। আপাতত আমাদের ব্লকেড কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তবে আমরা সেতু এলাকায় সড়কের পাশে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’
মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) জিয়াউল হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক পুলিশ, পদ্মা উত্তর থানা এবং ডিবি পুলিশের সদস্যরা সেতু এলাকায় রয়েছেন।
এদিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ব্লকেড কর্মসূচির আওতায় এক ঘণ্টার জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে উভয় লেন আটকে অবরোধ শুরু করেন তাঁরা। প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধের পর বিকেল সাড়ে ৫টা ২৫ মিনিটের দিকে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সরকারের প্রথম দায়িত্ব ছিল এ দেশের ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের বিচার করা। কিন্তু বিচার নিয়ে গড়িমসি আমরা দেখেছি। যার চূড়ান্ত ধৃষ্টতা আজ আমরা গোপালগঞ্জে দেখেছি। এসব সন্ত্রাসীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের প্রশ্নে আমরা দল-মতনির্বিশেষে একতাবদ্ধ থেকে এ সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করব।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তাঁর দোসররা এ দেশে রয়ে গেছে। তারা দেশে প্রতিনিয়ত অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার যদি শক্ত হাতে ফ্যাসিবাদী দোসরদের দমন করতেন, তাহলে তাঁরা এই সাহস দেখাত না। যেকোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি পালনের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। অন্তর্বর্তী এনসিপির নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাঁরা যদি এই ঘটনা সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগের গ্রেপ্তার না করে, তাহলে সারা দেশে আমরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলব।’
ব্লকেড কর্মসূচি পালিত হয়েছে বগুড়ার শেরপুর, রাজবাড়ী ও সুনামগঞ্জেও। বগুড়ার শেরপুরে বুধবার বিকেল পাঁচটা থেকে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। অবরোধ চলে পৌনে এক ঘণ্টা। এ সময় উভয় লেনের সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর অবরোধকারীরা মহাসড়ক থেকে চলে যান। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
রাজবাড়ীতে দুই ঘণ্টা একটি মহাসড়ক ও একটি আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ (ব্লকেড) করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। বুধবার বিকেল পৌনে চারটা থেকে পৌনে ছয়টা পর্যন্ত রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে কর্মসূচি তুলে নেওয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, অবরোধের সময় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আটকে আছে। একইভাবে রাজবাড়ী কুষ্টিয়া-আঞ্চলিক মহাসড়কেও বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আটকে আছে। ঢাকাগামী এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা বিভিন্ন ধরনের কয়েক শ যানবাহন আটকে আছে। এতে দুর্ভোগ দেখা দেয়।
রাজবাড়ী সদর থানার কর্মকর্তা মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সেনাবাহিনীও আমাদের সহযোগিতা করছে।’
সুনামগঞ্জে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন। এনসিপির নেতা-কর্মীরা বিকেল চারটার দিকে পৌর শহরের আলফাত স্কয়ার এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। তাঁরা এখানে প্রায় দেড় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন। এ সময় সড়কের যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। সড়কে অবস্থানকালে নেতা-কর্মীরা গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে নানা স্লোগান দেন। হামলার সঙ্গে জড়িত নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফ্যাসিবাদের কোনো স্থান হবে না। তাদের প্রতিহত করতে হবে। জুলাই আন্দোলনের চেতনায় তাদের সব নৈরাজ্য, ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন প্রতিনিধি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মুন্সিগঞ্জ, বগুড়ার শেরপুর, রাজবাড়ী ও নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ)