টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটের আগে হত্যা করা হয় শ্বশুর-পুত্রবধূকে, ডাকাত দল নেতার জবানবন্দি
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত এক মাদ্রাসাশিক্ষক ও তাঁর পুত্রবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার পর টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করা হয়। এ ঘটনায় আন্তজেলা ডাকাত দলের ১১ সদস্য জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে। তাঁদের মধ্যে দলের নেতা আবদুল হাকিম (৩৪) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বগুড়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এর বিচারক ফারুক আহমেদ এই জবানবন্দি রেকর্ড করেন। আবদুল হাকিম বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার বেরুঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে ডাকাতি, লুট, চুরি ও দস্যুতাসহ সাতটি মামলা আছে।
ডাকাতি ও হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আরেক আসামি আবদুল মান্নানের (৫০) তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। দুপচাঁচিয়ার লক্ষ্মীমণ্ডপ গ্রামের বাসিন্দা মান্নান আগে নিহত গৃহকর্তার মালিকানাধীন একটি গভীর নলকূপে পাহারাদারের কাজ করতেন।
গত সোমবার রাজধানীর কমলাপুর এলাকা থেকে হাকিম ও মান্নানকে গ্রেপ্তার করে বগুড়া ডিবির একটি দল। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা থেকে ডাকাত দলের আরও এক সদস্য রফিকুল ইসলামকে (৪১) গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আদমদীঘি উপজেলার বাসিকোড়া গ্রামের বাসিন্দা। গ্রেপ্তার তিনজনের কাছ থেকে লুট করা বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
আদালতে একজন আসামির জবানবন্দি এবং অন্যজনের রিমান্ড মঞ্জুরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়া আদালতের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন।
৮ জুলাই রাতে দুপচাঁচিয়ার লক্ষ্মীমণ্ডপ গ্রামে নিজ বাড়িতে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আফতাব উদ্দিন (৭০) ও তাঁর ছেলে সৌদিপ্রবাসী শাহজাহানের স্ত্রী রিভা আক্তার (৩৫) খুন হন। ৯ জুলাই সকালে বাড়ি থেকে শ্বশুর ও পুত্রবধূর হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর আফতাব উদ্দিনের মেয়ে তহমিনা বিবি বাদী হয়ে দুপচাঁচিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা ডিবিকে। এরপর হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামে ডিবির একাধিক দল।
বগুড়া জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার প্রথম আলোকে বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্তের একপর্যায়ে কমলাপুর থেকে দুই ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের দেওয়া তথ্যে কুড়িগ্রাম থেকে আরেকজন ধরা পড়ে।
আদালত ও তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে আবদুল হাকিম জানান যে আফতাব উদ্দিনের বাড়িতে ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল তাঁরই সাবেক নলকূপ পাহারাদার আবদুল মান্নান। মান্নান আফতাব উদ্দিনের আর্থিক অবস্থা ও বাড়ির ভেতরের তথ্য জানতেন। একসময় মাদক সেবন ও অর্থ আত্মসাতের কারণে তাঁকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়। পরে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি ডাকাতির পরিকল্পনা করেন এবং হাকিমদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
আবদুল হাকিমের ভাষ্যমতে, মান্নান তাঁদের জানান যে আফতাব উদ্দিনের কাছে গভীর নলকূপের সেচ বাবদ আদায় করা এবং জমি লিজের কয়েক লাখ টাকা রয়েছে। এ ছাড়া বাড়িতে স্বর্ণালংকারও আছে। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ৮ জুলাই রাত দুইটার দিকে তাঁরা ১১ জন মিলে প্রাচীর টপকে বাড়িতে ঢোকেন। প্রথমে আফতাব উদ্দিনের হাত-পা বেঁধে তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পরে তাঁর পুত্রবধূ রিভা আক্তারকেও একইভাবে হত্যা করা হয়। এরপর ঘরের ভেতর থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করা হয়।