এনবিআর চেয়ারম্যানকে নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে মন্তব্য করায় নিরাপত্তা প্রহরী বরখাস্ত
এবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর বিভাগের নিরাপত্তা প্রহরী সেলিম মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি কর অঞ্চল-১০ এর সার্কেল-২০০ এর নিরাপত্তা প্রহরী। নিজের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে এনবিআর চেয়ারম্যান সম্পর্কে শিষ্টাচারবহির্ভূত মন্তব্য করায় তাঁকে বরখাস্ত করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার কর অঞ্চল-১০ থেকে এক চিঠিতে সেলিম মিয়াকে বরখাস্ত করা হয়। এই কর অঞ্চলের কর কমিশনার শাহ আলী চিঠিতে সই করেন।
চিঠিতে বলা হয়, সেলিম মিয়ার নামে নিবন্ধন করা মুঠোফোন নম্বরের বিপরীতে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান সম্পর্কে শিষ্টাচারবহির্ভূত মন্তব্য বা আচরণ করেন। যেহেতু সেলিম মিয়া স্বয়ং ওই মুঠোফোন নম্বরটি তাঁর নিজ নামে নিবন্ধন করা বলে স্বীকার করেছেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮–এর ৩ (খ) বিধি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮–এর বিধি ১২ (১) অনুযায়ী সেলিম মিয়াকে সরকারি চাকরি হইতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি খোরপোশ প্রাপ্য হবেন।
গত মঙ্গলবার ১৪ জন শুল্ক, কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে সরকার। বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
যাঁরা বরখাস্ত হলেন মুসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার, ঢাকার কর অঞ্চল-৮ এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্পের উপ–প্রকল্প পরিচালক সিফাত ই মরিয়ম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দ্বিতীয় সচিব শাহাদাত জামিল, ঢাকা কর অঞ্চল-২ এর যুগ্ম কর কমিশনার মাসুমা খাতুন, কর অঞ্চল-১৫ এর যুগ্ম কর কমিশনার মুরাদ আহমেদ, কুষ্টিয়া কর অঞ্চলের মোরশেদ উদ্দীন খান, নোয়াখালী কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, কক্সবাজার কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার আশরাফুল আলম প্রধান, খুলনা কর অঞ্চলের উপ–কর কমিশনার শিহাবুল ইসলাম, রংপুর কর অঞ্চলের উপ–কর কমিশনার নুশরাত জাহান ও কুমিল্লা কর অঞ্চলের উপ–কর কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান, খুলনা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল বশর ও ঢাকা উত্তর কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা সবুজ মিয়া।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত মাসে এনবিআরে যে আন্দোলন হয়েছে, তাঁরা সবাই ওই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। কেউ কেউ নেতৃত্বও দিয়েছেন। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন হয়। বরখাস্ত হওয়া মুসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এনবিআর ঐক্য পরিষদের সভাপতি এবং ঢাকার কর অঞ্চল-৮ এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা সহসভাপতি পদে আছেন।
গত মাসে রাজস্ব খাতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ২৮ ও ২৯ জুন সারা দেশে কাজ বন্ধ করে দেন তাঁরা। এরপর ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার করেন তাঁরা।
এরপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। আন্দোলন প্রত্যাহারের পরের এই পর্যন্ত তিনজন সদস্য ও একজন কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। কাজ বন্ধ রাখার দায়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তৎকালীন কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া এনবিআরের দুজন সদস্যসহ ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। তাঁদের অধিকাংশই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা—এই দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এর পর থেকে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে যৌক্তিক সংস্কারে দাবিতে প্রায় দেড় মাস আন্দোলন করেন।