ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ১৯ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা, চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী কী কেনার কথা আছে
যুক্তরাষ্ট্র ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে একটি বাণিজ্যিক চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তিতে ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে বড় অঙ্কের পণ্য কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চহারের পাল্টা শুল্ক এড়াতে সক্ষম হয়েছে।
স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তির ঘোষণা দেন।
ট্রাম্প বলেন, এই চুক্তি অনুযায়ী ইন্দোনেশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা পণ্যের ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তিনি নিজের মালিকানাধীন ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানান।
চুক্তি অনুযায়ী, যারা শুল্ক ফাঁকি দিতে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে অন্য দেশ ঘুরিয়ে পণ্য পাঠাবে, তাদের পণ্যে আরও বেশি শুল্ক বসানো হবে।
ট্রাম্প লিখেছেন, এই চুক্তির অংশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের জ্বালানি, ৪৫০ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য ও ৫০টি বোয়িং উড়োজাহাজ (বেশির ভাগই বোয়িং ৭৭৭ মডেল) কিনতে সম্মত হয়েছে।
ট্রাম্প আরেকটি আলাদা পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে হওয়া এই চুক্তিটি সবার জন্যই দারুণ হবে।
তবে বোয়িং কোম্পানির শেয়ারের দামে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ শুল্ক দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। সে সময় ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, এ শুল্ক আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। তবে মঙ্গলবারের ঘোষণায় নতুন করে ১৯ শতাংশ শুল্ক ঠিক কবে থেকে কার্যকর হবে, সেটা স্পষ্ট করেননি।
এই চুক্তির আওতায় কতটা সময়ের মধ্যে পণ্য কিনতে হবে, সেটাও এখনো জানানো হয়নি।
একই দিন ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, তিনি শিগগিরই ছোট দেশগুলোকেও জানাবেন যে তাদের ওপর নতুন শুল্ক কত হবে। সম্ভবত এ শুল্ক ১০ শতাংশের একটু বেশি হবে। ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে যে চুক্তি হয়েছিল, সেটা ‘প্রায় চূড়ান্ত’।
তবে ভিয়েতনামের চুক্তির বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি। বিশেষ করে কোন ধরনের পণ্যকে অবৈধ ট্রান্সশিপমেন্ট বলে ধরা হবে এবং ৪০ শতাংশ শুল্ক বসবে—এসব বিষয় স্পষ্ট নয়।
ট্রাম্প বলেন, চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে তিনি এটা নিয়ে ভাবছেন।
মেরিল্যান্ড অঙ্গরোজ্যের একটি বিমানঘাঁটিতে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভিয়েতনামের সঙ্গে আমাদের একটা চুক্তি হয়েছে এবং এটা প্রায় চূড়ান্ত।’
ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর দ্রুত আরও বাণিজ্য চুক্তি করার চাপ আছে। কারণ, সম্প্রতি অনেক দেশ পাল্টা শুল্ক এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইছে।
চলতি বছরের ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রথমবার শুল্ক স্থগিত করলে হোয়াইট হাউস বলেছিল, ৯০ দিনে ৯০টি চুক্তি হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ট্রাম্প শুধু যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গে চুক্তি করেছেন এবং চীনের সঙ্গে পারস্পরিক শুল্ক কিছুটা কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তির বিষয়ে কথাবার্তা চলছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও আলোচনা চলছে।
ইন্দোনেশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ডিনো পাতি জলাল গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, ইন্দোনেশিয়ার ভেতরের সূত্রে জানা গেছে, সরকার এই চুক্তি নিয়ে খুশি।
গত এপ্রিলে ট্রাম্প প্রায় সব বাণিজ্য অংশীদারের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসান। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, পরে এ হার আরও বৃদ্ধি করা হবে, যার মধ্যে ইইউ ও ইন্দোনেশিয়াও ছিল।
৯ জুলাই ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। ট্রাম্প পরে সেই তারিখ ১ আগস্ট করেছেন। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও তিনি ১ আগস্টকে নতুন দিন ধার্য করেছেন। এটা ছিল তাঁর দ্বিতীয় দফায় সময় বৃদ্ধি।
এখন ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের কাছে চিঠি পাঠাচ্ছেন। ওই চিঠিতে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আগস্ট থেকে কোন দেশ কী হারে শুল্কের মুখোমুখি হবে।
এখন পর্যন্ত হোয়াইট হাউস ২০টির বেশি দেশকে এমন চিঠি পাঠিয়েছেন। যেমন ইইউ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া। কানাডা ও মেক্সিকোও এই তালিকায় পড়েছে।